
কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া বাজার, যা মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত, সম্প্রতি ২৫ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। গত বছর এই বাজারটি ইজারা হয়েছিল মাত্র আড়াই কোটি টাকায়, কিন্তু এবার তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এই বাজারটি ইজারা নিয়েছেন রামু উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব তৌহিদুল ইসলাম। তিনি এবং বিএনপি সমর্থক ৪০ জনের বেশি নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী আগামী এক বছর এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করবেন।
গর্জনিয়া বাজারটি রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত এবং এটি মিয়ানমার সীমান্তের খুব কাছাকাছি। গত বছর এই বাজারটি ইজারা হয়েছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকায়, কিন্তু এবার তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এই বাজারটি ইজারা নিয়েছেন রামু উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব তৌহিদুল ইসলাম। তিনি এবং বিএনপি সমর্থক ৪০ জনের বেশি নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী আগামী এক বছর এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করবেন।
এই বাজারটি কেন এত চড়া মূল্যে ইজারা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বাজারটি চোরাই গরু বিক্রি এবং মাদক পাচারের জন্য ব্যবহৃত হয়। গত বৃহস্পতিবার রামু উপজেলা পরিষদের উন্মুক্ত দরপত্রে গর্জনিয়া বাজারের সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে তৌহিদুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি ২৫ কোটি টাকা দর দিয়েছেন। এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রামু উপজেলার ১৩টি সরকারি হাটবাজারের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এই নিলামে সবচেয়ে বেশি নজর ছিল গর্জনিয়া বাজারের দিকে। বাজারটির জন্য ৪৫টি ফরম বিক্রি হয়, যার মধ্যে সাতজন উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে তৌহিদুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি ১৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দর দিয়েছেন। ভ্যাট ও কর যোগ করে মোট ইজারা মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের একটি বাজারের ইজারা মূল্য ২৫ কোটি টাকায় পৌঁছাবে, তা কল্পনাও করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, ইজারা মূল্যের ৩০ শতাংশ জামানত হিসেবে ইতিমধ্যে ৬ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। বাকি টাকাও নিয়মমাফিক আদায় করা হবে।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আগে এই বাজারটি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করত। তারা মিয়ানমার থেকে চোরাই গরু এনে বাজারের ইজারা মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন প্রতিযোগী বেড়েছে, তাই ইজারা মূল্য এত বেশি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিনি একা নন, রামু, কক্সবাজার ও ঈদগাঁও এলাকার বিএনপি সমর্থক ৪০ জন ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিক মিলে একটি ‘বিজনেস ফোরাম’ গঠন করেছেন। তারা প্রতিজন ৫০ লাখ টাকা করে ২০ কোটি টাকা জমা করেছেন। এই টাকা দিয়ে গর্জনিয়া বাজার ইজারা নেওয়া হয়েছে।
গর্জনিয়া বাজারটি রামু উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বাজারে প্রায় ৫০০টি দোকান রয়েছে। এ ছাড়া বাজারের অধীনে আরও দেড় কিলোমিটার দূরে গরু বিক্রির একটি মাঠ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এই বাজারটি চোরাই গরু ও মাদক পাচারের জন্য ব্যবহৃত হয়। মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু এই বাজারে আনা হয়। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের কাগজপত্রে এই গরুগুলোকে স্থানীয় গরু হিসেবে দেখানো হয়। গরুর পাশাপাশি মাদক পাচারও এই বাজার দিয়ে হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গরু ও মাদক পাচার নিয়ে গর্জনিয়া বাজারে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহতও হয়েছেন। তবে চোরাচালান বন্ধ হয়নি। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসরুরুল হক বলেন, গরু ও মাদক পাচার নিয়ে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পাচারের সময় পুলিশ ১১টি গরু জব্দ করেছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের পর সেখানকার গৃহপালিত পশু কম দামে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি মাদক পাচারও বাড়ছে। মূলত মাদক পাচার ঘিরে কয়েক বছর ধরে গর্জনিয়া বাজার দখলের প্রতিযোগিতা চলছে।
২০২৩ সালে গর্জনিয়া বাজার ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় ইজারা পেয়েছিলেন রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টো। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ২০২৪ সালে এই বাজার ইজারা হয়েছিল ২ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। তখন ইজারা পেয়েছিলেন কক্সবাজার সদরের বাসিন্দা আবদুর রহিম।
চোরাই গরু ও মাদক পাচার বন্ধে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে এই বাজারটি কেন এত চড়া মূল্যে ইজারা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।