
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বুধবার (৫ মার্চ) লন্ডনের চ্যাথাম হাউসে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর (PoK) যদি ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তাহলে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, “জম্মু ও কাশ্মীরের ‘চুরি হওয়া অংশ’ (PoK) ফিরে পেলে এই অঞ্চলের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।”
জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দেন, ভারত সরকার PoK-কে ফেরত আনার জন্য কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো সেখানে (কাশ্মীরে) উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। ৩৭০ ধারা বাতিল করা ছিল এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। এখন আমরা সেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করছি।”
বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতারা বারবার PoK “ভারতের মানচিত্রে ফেরত আনার” প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেছিলেন, “মোদি সরকার গঠনের ৬ মাসের মধ্যে PoK ভারতের অংশ হয়ে যাবে।” জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে বিশ্লেষকরা এই প্রেক্ষাপটে দেখছেন। তারা মনে করছেন, তৃতীয় মোদি সরকারের এক বছর পূর্তির আগে এই বক্তব্য আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের অবস্থান
জয়শঙ্কর কাশ্মীরে সরকারের পদক্ষেপের সাফাই গেয়ে বলেন, “৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে অঞ্চলটির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। আমরা স্থানীয় জনগণের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি।” তবে তিনি স্বীকার করেন, কাশ্মীরের সমস্ত সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি।
যুক্তরাজ্য সফর ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা
লন্ডন সফরকালে জয়শঙ্কর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়র স্টার্মারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা করেন। তবে তার PoK সংক্রান্ত মন্তব্য এই সফরের প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।
বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জয়শঙ্করের এই বক্তব্য পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে নতুন করে টানাপড়েন সৃষ্টি করতে পারে। ইসলামাবাদ ইতিমধ্যে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন দেওয়া দেশগুলোর প্রতিক্রিয়াও এখন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর বলেন, “কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা কোনো বহিরাগত হস্তক্ষেপ মেনে নেব না।”