
টিকটক তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে ১ কোটি ১৬ লাখ ভিডিও মুছে ফেলেছে: বিস্তারিত প্রতিবেদন
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক গত তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে ১ কোটি ১৬ লাখ (১১.৬ মিলিয়ন) ভিডিও মুছে ফেলেছে। এই পদক্ষেপটি প্ল্যাটফর্মের কন্টেন্ট মডারেশন নীতির আওতায় নেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয় আইন, সম্প্রদায় নির্দেশিকা এবং সামাজিক শান্তি রক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।
মুছে ফেলা ভিডিওর কারণ
টিকটকের একটি স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম এবং মানব মডারেটরদের সমন্বয়ে গঠিত টিম বাংলাদেশে আপলোড হওয়া ভিডিওগুলোর ওপর নজরদারি চালায়। মুছে ফেলা ভিডিওগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশের বিষয়বস্তু ছিল:
- অপপ্রচার ও ভুয়া তথ্য (মিসইনফরমেশন)।
- সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা ঘৃণামূলক বক্তব্য।
- অপমানজনক বা সাইবার বুলিং কন্টেন্ট।
- যৌন বা অশ্লীল ম্যাটেরিয়াল।
- কপিরাইট আইন লঙ্ঘন।
টিকটকের গ্লোবাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলা ভিডিওগুলোর ৮৮% ব্যবহারকারীদের রিপোর্ট করার আগেই প্ল্যাটফর্মের অটোমেটেড টুলস দ্বারা শনাক্ত করা হয়। বাকিগুলো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা ব্যবহারকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরানো হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) ভূমিকা
বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিটিআরসি টিকটকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মকে বারবার দেশীয় আইন মেনে অপকন্টেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। ২০২৩ সালের শুরুতে টিকটকের সাথে বিটিআরসির এক বৈঠকে প্ল্যাটফর্মটিকে স্থানীয় আইন ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান রেখে কন্টেন্ট মডারেশন জোরদার করতে বলা হয়।
টিকটকের প্রতিক্রিয়া
টিকটক একটি বিবৃতিতে জানায়, তারা বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী তাদের কমিউনিটি গাইডলাইনস কঠোরভাবে প্রয়োগ করে। প্ল্যাটফর্মটি দাবি করে, ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বৈষম্য বা সহিংসতা প্রতিরোধে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া, বাংলাদেশে টিকটক স্থানীয় ভাষায় কন্টেন্ট মডারেশনের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করেছে বলে জানানো হয়।
প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
- সরকার ও সুশীল সমাজ: বিটিআরসি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা কর্মকর্তারা টিকটকের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এটি সাইবার অপরাধ ও সামাজিক অস্থিরতা রোধে সহায়ক।
- মুক্তবাক সমর্থকরা: কিছু মানবাধিকার সংগঠন ও ডিজিটাল অ্যাক্টিভিস্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, অতিরিক্ত সেন্সরশিপ অভিব্যক্তির স্বাধীনতা সীমিত করতে পারে।
- কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা: অনেক টিকটক ব্যবহারকারী দাবি করছেন, প্ল্যাটফর্মের অটোমেটেড সিস্টেম কখনো কখনো নিষ্পাপ ভিডিওকে ভুলভাবে ফ্ল্যাগ করে, যা তাদের সৃষ্টিশীলতাকে ক্ষুণ্ন করছে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
বাংলাদেশে টিকটকের ব্যবহারকারী প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ (২০২৩ সালের তথ্য)। এই বিশাল ব্যবহারকারী-base নিয়ন্ত্রণে প্ল্যাটফর্মটি AI-ভিত্তিক টুলস আরও উন্নত করতে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমের দায়বদ্ধতা ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের জটিল সম্পর্কের প্রতিফলন তৈরি করেছে, যা বাংলাদেশের ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত করবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।