সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা: গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক দায়ের করা মামলার বিস্তারিত তথ্য নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

১. মামলার মূল অভিযোগ ও পরিমাণ

দুদকের মামলায় গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩৪ টাকার জ্ঞাত আয়ের অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া, তার নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯৭ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত করা হয়েছে । এই লেনদেনগুলো মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি দমন আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

২. মামলার আইনগত ভিত্তি

দুদক এই মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় । অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি এই সম্পদ অর্জন করেছেন এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তা বৈধতা দিতে চেয়েছেন।

৩. পূর্ববর্তী তদন্ত ও নিষেধাজ্ঞা

  • ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুদক গোলাম ফারুকসহ অন্যান্য সাবেক সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে। তদন্তে তার দেশ-বিদেশে বিপুল সম্পদ এবং জমি-ফ্ল্যাট দখলের তথ্য উঠে আসে ।
  • ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর আদালত তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যেহেতু তদন্ত চলাকালে তিনি বিদেশে পলায়ন করতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় ।

৪. রাজনৈতিক পটভূমি

গোলাম ফারুক পাবনা-৫ আসন থেকে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয় । তার সম্পদের পরিমাণ ২০০৮ সালে ৪৭ লাখ টাকা থেকে ২০২৩ সালে ৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় বৃদ্ধি পাওয়ায় দুদক সন্দেহ করে এটি অবৈধ উপায়ে অর্জিত ।

৫. অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অভিযোগ

  • জমি দখল ও মার্কেট নির্মাণ: ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক এমপি সাদেক খানের সাথে যৌথভাবে হিন্দু সম্পত্তি দখল করে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করার অভিযোগও তদন্তে উঠে এসেছে ।
  • বিদেশে সম্পদ পাচার: দুদকের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গোলাম ফারুকের বিদেশে (বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে) পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য , তবে এটি মূলত অন্য গোলাম ফারুক (সাবেক ডিএমপি কমিশনার)-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে মনে হয়, যার বিরুদ্ধে ৩,০০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ রয়েছে ।

সারসংক্ষেপ

দুদকের মামলাটি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আর্থিক অনিয়মের ওপর ভিত্তি করে দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার ফলাফল বাংলাদেশের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।
তথ্যসূত্র: দুদকের প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং সংশ্লিষ্ট আদালতের রায় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *