ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের পিটিশন খারিজ।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন খারিজ
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ পিটিশন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানায়। আদালতের বেঞ্চ জানিয়েছে, এটি প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, যা ভারতের শীর্ষ আদালতের এখতিয়ারের বাইরে।

পিটিশনটি দায়ের করেছিলেন ভারতে ইসকন মন্দির স্টিয়ারিং কমিটির উপসভাপতি এবং পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় ‘ভগবান জগন্নাথ রথযাত্রা কমিটি’র প্রধান রাজেশ ঢানডা। পিটিশনে অভিযোগ তোলা হয়েছিল যে বাংলাদেশে হিন্দুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতন ও হামলার শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও, পিটিশনে ভারত সরকারকে বাংলাদেশে অবস্থিত তাদের দূতাবাসের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

পিটিশনে নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯-এর অধীনে ‘কাট-অফ ডেট’ বাড়ানোরও দাবি করা হয়, যাতে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা হিন্দুরা ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন।

প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না পিটিশনটি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “এটি কোনোভাবেই আমাদের বিষয় নয়। আপনাদের কি মনে হয়, সরকার এই বিষয়ে অবহিত নয়? এই বিষয়ে এই আদালত কী করতে পারেন?” তিনি আরও যোগ করেন, “এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়… আমরা কীভাবে তা নিয়ে মন্তব্য করব? প্রতিবেশী একটি দেশের নিজস্ব বিষয় নিয়ে আমাদের আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।”

আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর আবেদনকারীর আইনজীবী পিটিশনটি প্রত্যাহার করে নেন। তবে তিনি জানান, তাঁর মক্কেল বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের দ্বারস্থ হতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিটিশনটি খারিজ হওয়ায় আপাতত ভারতের আদালতে এ নিয়ে আর কোনো মামলা করা যাবে না। তবে, বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সচেতন করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। এসব ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে।

এই পিটিশনটি সেই প্রেক্ষাপটেই দায়ের করা হয়েছিল, কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তে বিষয়টি এখন ভারত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *