
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের বাদে অরুয়াইল গ্রামে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে তার পরিবারের সামনে গাছে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এই ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার ভোরে। পরদিন শুক্রবার ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
নির্যাতনের শিকার কিশোরের চাচাতো ভাই বাদী হয়ে অরুয়াইল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুল লতিফ (৫০) এবং আরও অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলার পর শুক্রবার বিকেলে পুলিশ আবদুল লতিফকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে আবদুল লতিফ তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে কিশোরের বাড়িতে হানা দেন। পাশের বাড়ি থেকে মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে বাড়ির উঠানে আনা হয়। এরপর তার হাত-পা বেঁধে দুইটি গাছে ঝুলিয়ে উপর্যুপরি লাঠিপেটা করা হয়। ঘটনার সময় উপস্থিত স্বজনরা ভয়ে কিছু বলতে পারেননি, কারণ অভিযুক্ত ব্যক্তি এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত।
১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, কিশোরের দুই হাত একটি গাছে আর দুই পা আরেক গাছে বাঁধা, ফলে সে পুরোপুরি ঝুলন্ত অবস্থায়। আবদুল লতিফ তাকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন এবং কিশোর যন্ত্রণায় “আল্লাহ, আল্লাহ” বলে চিৎকার করছে। আশপাশে অন্তত পঞ্চাশ জন নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে এ নির্যাতনের দৃশ্য দেখছেন, কিন্তু কেউ কিছু বলছেন না।
মামলার বাদী বলেন, “আমরা গ্রামের সবচেয়ে নিরীহ মানুষ। আবদুল লতিফ চাইলে আমাদের যেকোনো সময় যা খুশি করতে পারে, কেউ কিছু বলবে না। কয়েক দিন ধরে সে আমার ভাইয়ের ওপর রাগান্বিত ছিল।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, “আবদুল লতিফ অনেক দিন ধরে আমাদের কমিটিতে আছেন। এমন ঘটনার জন্য আমরা উপজেলা বিএনপির মতামত চেয়েছি। প্রয়োজন হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, “আবদুল লতিফ প্রায় সময়ই এমন ঘটনা ঘটান। তিনি খুবই প্রভাবশালী, তাই তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না।”
সরাইল থানার ওসি মো. রফিকুল হাসান বলেন, “নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং এজাহারভুক্ত একমাত্র আসামি আবদুল লতিফকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে।