
গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৪ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত
গাজীপুরের বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের টেক্সটাইলস ও অ্যাপারেলস বিভাগের ১৪টি কারখানা শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে বন্ধ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে শ্রম উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য শ্রম ও অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ৫২৫ কোটি টাকার ব্যবস্থা করেছে। আগামী ৯ মার্চ থেকে চার হাজার শ্রমিকের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। এছাড়া, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের আর্থিক অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে আসে গত কয়েক মাস ধরে। প্রতিষ্ঠানটির বিপরীতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে শুধুমাত্র জনতা ব্যাংক থেকেই নেওয়া হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া, অন্তত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণ নেওয়া হয়েছে, যাদের অস্তিত্বই নেই। এসব অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সংকট তীব্র হয়, যা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে বাধার সৃষ্টি করে।
শ্রম উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, শ্রমিকদের কর্মহীন করে দেওয়া সরকারের উদ্দেশ্য নয়। তবে আর্থিক সংকট ও ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে কারখানাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, “কোনো শ্রমিকের চাকরি যাক, এটা আমরা চাইনি, এখনও চাইবো না, ভবিষ্যতেও চাইবো না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “মধ্য রোজার আগেই সবাই তাদের বকেয়া বেতন পেয়ে যাবেন। আমরা চেষ্টা করছি যেন কোনো শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”
শ্রম উপদেষ্টা জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ঋণ কেলেঙ্কারি ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”
শ্রম উপদেষ্টা বিদেশে পালিয়ে যাওয়া বেক্সিমকো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেশে ফিরে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “যারা বিদেশে পালিয়ে আছেন, তাদের উচিত দেশে ফিরে এসে আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করা।”
সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “তিনি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং তাঁর বক্তব্য যথাযথ। তিনি কোনো কথা না বুঝে বলেননি। আমি তাঁকে একজন সৎ ও স্পষ্টবাদী ব্যক্তি হিসেবে জানি।”
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বকেয়া বেতন পরিশোধ ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই সংকট কতটা দ্রুত সমাধান হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা পায় কিনা।