ট্রাম্পের ফাঁদ: নিজেরই সাজানো কৌশলে আটকাচ্ছেন

ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশল

অন্যের জন্যে গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়—এই বাংলা প্রবাদটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিগুলোর প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হচ্ছে। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে, অন্যের ক্ষতি কামনা করা বা আগ্রাসী নীতি গ্রহণের ফলাফল ভালো হয় না। ট্রাম্পের নীতিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তার অনেক সিদ্ধান্তই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে।

বাণিজ্যযুদ্ধ: নিজের ফাঁদে নিজেই

ট্রাম্প প্রশাসন চীন, কানাডা, মেক্সিকো এবং অন্যান্য দেশের উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করে যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই নীতির ফলে মার্কিন ভোক্তাদেরই বেশি দাম দিতে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি আমদানিকৃত গাড়ির দাম যদি ৫০,০০০ ডলার হয় এবং তার উপর ২৫% শুল্ক বসে, তাহলে মার্কিন ক্রেতাকে বাড়তি ১২,৫০০ ডলার দিতে হবে। এই বাড়তি খরচ সরাসরি মার্কিন ভোক্তাদের উপরই পড়ছে। এভাবে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র তিন ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল, যা তার জিডিপির প্রায় ১১%। বাণিজ্যযুদ্ধের মাধ্যমে পুঁজির অবাধ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে।

ভৌগলিক আগ্রাসন: বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা

ট্রাম্পের আগ্রাসী ভৌগলিক নীতিও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেক্সিকো উপসাগরকে ‘গালফ অব আমেরিকা’ হিসেবে অভিহিত করার চেষ্টা থেকে শুরু করে কানাডা এবং গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বানানোর আকাঙ্ক্ষা—এসবই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে গাজা দখলের ইচ্ছাও এই অঞ্চলের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিবেশী দেশের উপর আগ্রাসী মনোভাব বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ট্রাম্পের সম্প্রসারণবাদী নীতি কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? এমন প্রশ্নও উঠছে।

অভিবাসননীতি: বৈচিত্র্যের উপর আঘাত

যুক্তরাষ্ট্র একটি অভিবাসী দেশ হিসেবে গড়ে উঠেছে। কিন্তু ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নীতি দেশটির বৈচিত্র্য এবং মানবাধিকারের ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তার নীতির ফলে হাজারো পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়েছে, এবং অভিবাসীদের উপর ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের মতো সংগঠনগুলো মনে করে, ট্রাম্পের নীতি শুধু অভিবাসীদেরই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক কাঠামোকেও ধ্বংস করছে।

প্রশাসনিক রদবদল: অস্থিরতা সৃষ্টি

ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক প্রশাসনিক রদবদলও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। ইউএসএআইডি, সিআইএ এবং এফবিআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদে তার পছন্দের লোকজন বসানো হয়েছে। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের পরিবর্তন প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

ট্রাম্পের নীতিগুলো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির মতো মনে হচ্ছে। তার আগ্রাসী বাণিজ্য, ভৌগলিক সম্প্রসারণ এবং অভিবাসনবিরোধী নীতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ইতিহাস বলে, যারা অন্যের জন্য গর্ত খোঁড়ে, তারা শেষ পর্যন্ত সেই গর্তেই পড়ে। ট্রাম্পের নীতিগুলো কি যুক্তরাষ্ট্রকে সেই গর্তের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে? সময়ই তা বলবে।

সর্বোপরি, ট্রাম্পের নীতিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ধরনের পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার সিদ্ধান্তগুলো যদি ভুল প্রমাণিত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। ইতিহাসের শিক্ষা হলো—অন্যের ক্ষতি কামনা করা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *