খুলনায় ‘শেখ বাড়ি’র একটি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

খুলনায় বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে ‘শেখ বাড়ি’র একটি অংশ। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে বাড়িটি ভাঙচুর শুরু করেন। রাতভর দুটি বুলডোজার চালিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক, দেয়ালসহ বেশিরভাগ অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। খুলনা নগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত এই বাড়িটি ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল।

একই রাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটিও বুলডোজার দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়।

এই বাড়িটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ আবু নাসেরের বাসভবন ছিল। এখানে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বিসিবির সাবেক পরিচালক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শেখ সোহেল উদ্দিনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বসবাস করতেন। মূলত এই বাড়ি থেকেই পদ্মার এপারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি পরিচালিত হতো। গত বছরের ৪ আগস্ট প্রথম দফায় বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। সে সময় বাড়িতে কেউ ছিলেন না। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আবারও বাড়িটি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শিকার হয়। দরজা, জানালা থেকে শুরু করে বাড়ির সবকিছুই ধ্বংস করা হয়। এরপর বাড়িটিতে শুধু ইট-পাথরের কাঠামো অবশিষ্ট ছিল। কেউ যেন ভেতরে প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য প্রধান ফটকটি টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল। গতকাল সেই প্রধান ফটকসহ বাড়ির অবশিষ্ট অংশও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভাষণের খবর পাওয়ার পর গতকাল বিকেলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাড়িটি ভাঙচুরের ঘোষণা দেয়। রাত পৌনে ৯টার দিকে বাড়ির গেটের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। পরে টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা সিটি করপোরেশনের গ্যারেজ থেকে দুটি বুলডোজার নিয়ে এসে ভাঙচুর শুরু করা হয়। ভোর ৪টা পর্যন্ত এই ধ্বংসযজ্ঞ চলে।

ভাঙচুরের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। অনেকেই মুঠোফোনে ছবি, ভিডিও ও সেলফি তুলে এই মুহূর্তকে ধরে রাখেন।

বাড়িটি ধ্বংস করার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের জন্য ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম শুরু করে, যা ২০২৪ সালে এসে শেষ হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, কিন্তু তাদের কোনো অনুশোচনা নেই। আওয়ামী লীগের যত ‘কেবলা’ আছে, তার মধ্যে শেখ বাড়ি ছিল পদ্মার এপারের আওয়ামী লীগের প্রধান কেন্দ্র। বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের কোনো কেবলা থাকবে না, আওয়ামী লীগ থাকবে না, আওয়ামী লীগের কোনো দালাল থাকবে না। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নামে কোনো শব্দ উচ্চারিত হবে না।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে শেখ বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনের রাস্তায় উৎসুক মানুষের ভিড় জমে আছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপ থেকে রড খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ির অবশিষ্ট অংশটুকু কেন ভাঙা হলো না, তা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *