
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পদ্মা নদীর বালুঘাট দখলকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সশস্ত্র হামলার ঘটনায় এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফেরিঘাট বালুমহাল ও মসলেমপুর ১২ মাইল বালুঘাটে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীর তাণ্ডব চালানো হয়। প্রায় ৭০-৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক হামলাকারী ঘাটে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ ও ককটেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে পাঁচজন আহত হন এবং ১৮ থেকে ২৪টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর বা পুড়িয়ে দেওয়া হয়13।
ঘটনার পটভূমি:
বালু ব্যবসায়ী সোহেল রানা ভুঁইয়া বাবুর বক্তব্য অনুযায়ী, হামলার আগের দিন থেকেই একদল সন্ত্রাসী ঘাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের চেষ্টা করছিল। ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধভাবে এটির বিরোধিতা করলে প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়13। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নেতা তৌহিদুল ইসলাম আলমের অনুগত ক্যাডার রোকন ও উজ্জ্বলের নেতৃত্বে এই হামলা পরিচালিত হয়। তাঁরা প্রকাশ্যে নাইন এমএম পিস্তল, শটগানসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র মহড়া দেয়13।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:
বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম বিশু অভিযোগ করেন, বালুঘাটের দখল নিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে, তৌহিদুল ইসলাম আলম এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, সরকারি ইজারা পাওয়ার পর বৈধভাবে ঘাট পরিচালনা করছেন তিনি। তাঁর মতে, বিরোধী পক্ষই অবৈধভাবে ঘাট দখল করে তাণ্ডব চালিয়েছে13। উল্লেখ্য, বালুঘাট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরেও পদ্মার চর দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছিল4।
প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত:
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ শহীদুল ইসলাম জানান, হামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিবৃতি নেওয়া হচ্ছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি13।
পরিণতি:
এই ঘটনার পর বালু ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকেই ঘাটে কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ মানুষই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন13।
সংঘাতের বৃত্তান্ত:
- সময় ও স্থান: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ভেড়ামারার দুটি বালুঘাট।
- হামলার পদ্ধতি: মোটরসাইকেলবাহী সশস্ত্র গ্রুপের গুলি, ককটেল নিক্ষেপ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।
- ক্ষয়ক্ষতি: ৫ জন আহত, ১৮-২৪টি মোটরসাইকেল ক্ষতিগ্রস্ত13।
- রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা: বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর বিরোধের ইঙ্গিত134।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, বালুঘাট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাত ভবিষ্যতে আরও রক্তপাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যদি না প্রশাসন কঠোর হস্তক্ষেপ করে।